না বলা বানী
হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়
ক |
বিরা বলেন, অনেক কথা নাকি ব’লতে হয় না। চোখের ভাষাই নাকি ব’লে দ্যায় মানুষ কী ব’লতে চায়। কিন্তু সব চোখের ভাষা কি তা পারে? সকলে কি সকলের কথা বুঝতে পারে? পারলে অতীন কেন আজ আড়ালে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে হঠাৎ তাঁর চোখ থেকে গড়িয়ে আসা জল মুছলো? নিজের চোখ নিজে যে মুছবে, তারও জো নেই। পুরুষ না! একটু যে দুঃখ ক’রবে, তার তো উপায় নেই। পুরুষের নাকি চোখের জল ফেলা বারণ। কে নাকি এই বিশ্বাস মানুষের মনে গেঁথে দিয়ে গেছে। এমনকি রামায়ণে রামচন্দ্র সীতাদেবী’কে হারিয়ে অশ্রুমোচন ক’রেছিলেন ব’লে তাকে নানা নানা ভাষায় নিন্দামন্দ করা হ’য়েছিলো। এক কবি আবার ব’লেছেন, “বীরশোক অশ্রু নহে, অসির ঝংকার...।”
তাই গোপনে চোখ মুছেছে অতীন। আজ সরস্বতী পুজো। সকলে নানা নানাদিকে আনন্দ ক’রছে, বেড়াতে বেরোচ্ছে, রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে, ভিডিও দেখছে দল পাকিয়ে, এমনকি সিটি সেন্টার-এ গিয়ে আইনক্সে মুভি দেখছে। কিন্তু অতীন একা স’রে গেছে সকলের ছোঁয়াচ থেকে। ওর মনে হ’চ্ছে, ও যেন একটা আলাদা জাতি, আলাদা গোষ্ঠীর মানুষ। সকলের সাথে আজকে অন্তত ও বেমানান। অড। তাই সকলের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে পালিয়েছে পাড়ার পুজো প্যান্ডেল থেকে। কাউকে তো ব’লতেও পারছে না, ঘটনাটা কী। কেউ জানলেই ব’লবে, ‘ভ্যাট্, এটা নিয়ে ভাবছিস!’ এতোই যদি কেত্রে যাস তো আগে ব’লিস নি কেন? শ্রীরাধা’কে তোর মনের কথাটা ব’লিসনি কেন? এসব কবিতা মেরে জীবন চলবে না, বস্।’ কিন্তু সবই কি সবাই ব’লতে পারে? সব কি ব’লতে হয়? ভাষা কি প’ড়ে নেওয়া যায় না? যায় তো... ও কেন পারলো না প’ড়তে?
কবিতা লেখে অতীন। ক্লাশ নাইন থেকে ও কবিতা লিখছে। আগে স্কুলের ম্যাগাজিনে, পাড়ার ওয়াল ম্যাগাজিনে, পরে এখানে ওখানে আঞ্চলিক নানা পত্র-পত্রিকায় কবিতা দিতে দিতে আজ একটু পরিচয় হ’য়েছে। আজ দু-একটা কবি সম্মেলিনীতে ডাক-টাক পড়ে। নতুন ও প্রাচীন কবি’রা কবিতা শোনান। সেখান থেকে আহ্বান আসে অতীনের। তবে কবি বা সাহিত্যিকের পরিচয় মানে তো এই দূরদর্শনের যুগে ‘হায় ভোলা মন!’ বিশেষ ক’রে কবি। আজকের কবি কী যে লেখে! আগামাথা মানুষ নাকি বুঝতে গিয়ে ভিরমি খায়। তারা নাকি লেখে, ‘গাছের ডালে কাক... আমি তো অবাক। ভগবান, তুমি নাকি চানাচুর...।’ এইসব। মাথা নেই, মুণ্ডু নেই। যা নয় তা। নিজেরাই লেখে, নিজেরাই পড়ে, কিন্তু নিজেরাও মানে বোঝে না। যে কবিতা যত দুর্বোদ্ধ, সে কবিতা ততই গভীর নাকি। ফলে অতীনের কবি হিসেবে লোকখ্যাতি ওদের কবি সমাজেই আবদ্ধ। মানুষ’কে নাকি ওদের কবিতা বুঝতে গেলে আলাদা ক’রে গভীর পড়াশুনো ক’রে তবে কবিতা প’ড়তে হবে। কিন্তু মানুষের সে সময় কোথায়!
কবিতা লেখা অতীনের পেশা নয়। এই দুর্মূল্যের বাজারে একটা সরকারী চাকরী ও ব্যবস্থা ক’রে নিয়েছে। বাবা চ’লে গিয়ে এই জেদটা ওর মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিলো যে, একটা চাকরী পেতে হবে। কে একজন একদিন শুনিয়েছিলো, ‘ওসব কবিতা-ফবিতা লিখে কি পেট চলবে? বাবা’র পেনশান ছিলো ব’লে বেঁচে আছো। মা যদি একবার চোখ বোজে, তবে তো খাওয়ায়-দাওয়ায় ঘণ্টা বেজে যাবে।’ মা আজ বিছানায়। বাবা চ’লে যাবার পর থেকেই মা বিছানা নিয়েছে। বিশেষ ক’রে মা’র হাই সুগার। কী যে একটা অটুট বন্ধন ছিল ঐ বুড়োবুড়ি’র মধ্যে, কে জানে। প্রেমের মানে কী, তা কি বাবা বা মা বুঝতো? মনে তো হয় না। কিন্তু বাবা যাবার পর থেকে মা বিছানায়। বাবা তো অফিষ থেকে ফিরে অবধি বৈঠক খানায় ব’সে ব’সে তাস পেটাতেন। এটাই ছিল তাঁর বিনোদন। মা শুধু চা সাপ্লাই ক’রে ক’রে ক্লান্ত হ’তো। কোনো কোনোদিন মা রেগে গিয়ে চার কথা শুনিয়েও দিতো। মা রেগে গেলে গৌরকাকা, ভবতোষ কাকা বা বাবা নিজেও একে অপরকে চোখ টেপাটেপি ক’রে মা-এর রাগ হয়েছে, এই ইঙ্গিত পরস্পরকে জানিয়ে খেলা ভঙ্গ ক’রে দিতেন। যে যার বাড়ি চ’লে যেতেন। সেই বাবা চ’লে গেলে মা-ই সুগারে, বাতে, একটা হার্ট এ্যাটাকে একেবারে শয্যাশায়ী। সম্পূর্ণ মেডিকেশনে আছে মা। নার্স রাখতে হয়নি বটে। তবে দেখতে হয় অতীন’কেই।
তাই মা মাঝে মাঝে অতীন’কে তাগাদা দ্যায়--- আর কতদিন রে? এবার একটা বিয়ে কর। আমি অন্তত পুত্রবধূ’র সেবা পাই না পাই, তোকে তো হাত পুড়িয়ে খেতে হচ্ছে, দেখে যেতে হয় না। এই তো আমার অবস্থা। আজ সুস্থ, তো কাল বিছানায়। তুই তো রান্নাবান্না কিছুই পারিস না।
কিন্তু এই সম্বন্ধ দেখে একটার পর একটা মেয়ে রিফিউজ ক’রতে ক’রতে শেষে নিজেই ক্লান্ত হ’য়ে প’ড়ে একটাকেই পছন্দ ক’রে নিয়ে জীবন সঙ্গিনী বানাবার ব্যবস্থা কোনোদিন মেনে নিতে পারেনি অতীন। ও লক্ষ্য ক’রেছে, রাস্তাঘাটে এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে ঘোরাফেরা ক’রতে দেখা যায়। কিন্তু তারা যেন বিয়ের সম্বন্ধ ক’রবার সময় কোথায় হারিয়ে যায়! সম্বন্ধের পাত্রী মানে... সুশ্রী হোল তো সে এইসা মোটা, সুদেহী হ’লো তো কথা বলা’র কায়দা কেমন যেন বাচালের মতো ফটর ফটর করা... এইসব। এমন একটা পাত্রী পাওয়া যায় না, যে স্বর্গের অপ্সরা হবে না, কিন্তু তাকে দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ফলে বিয়ে করা হয় না অতীনের। মায়ের আশঙ্কাকে নিবৃত্ত ক’রতে তো তাড়াহুড়ো ক’রে একটা কিছু তো ঘটিয়ে দেওয়া যায় না।
বয়সটা এভাবে বেড়ে চ’লেছিলো অতীনের। সময় তো ব’সে থাকে না। একটা অপেক্ষায় ছিল অতীন। কেউ নিশ্চয়ই ওর জন্যে তৈরী হ’য়ে ব’সে আছে। মানুষ যতই কবিতা লিখুক, মন থেকে জন্ম-মৃত্যু-বিয়ের প্রবাদটা মুছে দিতে সে পারে না। ওটা বিশ্বাসের সাথে লেগেই থাকে। তাই অপেক্ষা। হঠাৎ ওর অপেক্ষা যেন একটা সুফল দেখালো।
দু বছর আগের সরস্বতী পুজোর দিন। পাড়াতে যে ক্লাবটায় ছেলেরা পুজো করে, সেখানে অতীনকেই সাজসজ্জা’র কাজটা ক’রে দিতে হয়। ফাইন আর্টের নানা দুর্বোধ্য আঁকিবুঁকি নকল ক’রে আর কাগজের নানা মডেল বানিয়ে ছোটোদের সরস্বতী মণ্ডপ সেজে ওঠে ওর হাতে। সেবারও এক মনে মণ্ডপ সাজাচ্ছিলো অতীন। পুরোহিত মশাই এসে পড়ে-পড়ে। অন্যত্র একটু কাজের চাপেই আগেভাগে নিজের দায়িত্বটা সম্পন্ন ক’রে উঠতে পারেনি অতীন। তখনও কাজ ক’রছে। হঠাৎই একটা নারীকণ্ঠ।
--- বাঃ বেশ সুন্দর তো আপনাদের প্যান্ডেল! উনি কি ভাড়া করা শিল্পী?
চোখ বেঁকিয়ে তাকিয়ে দেখলো অতীন। একটা মেয়ে। বাসন্তী রঙ্গের শাড়িতে বেশ সরস্বতী সরস্বতী চেহারা। ফর্সা, ছিপছিপে।
পাশ থেকে পাড়ার নিমাই ব’ললো--- না না। উনি তো আমাদের পাড়ার দাদা। অতীন দা। প্রত্যেকবার অতীনদাই আমাদের প্যান্ডেল সাজায়। আপনারা তো নতুন এসেছেন। তাই ওকে জানেন না।
মিঠুন যোগ ক’রলো--- অতীন দা কিন্তু এ তল্লাটের নাম করা কবি, দিদি।
অতীন প্রসঙ্গটা চাপা দিতে একটু অভিভাবকত্ব দেখিয়ে ব’ললো--- আমার আইডেন্টিটি না দিয়ে আর কয়েকটা সবুজ সেলোফেন পেপার হাতে দে। একটু বাকি আছে। এখুনি তোদের ঠাকুরমশাই এসে প’ড়বেন। আর এই সব সাজুগুজু বন্ধ রাখতে হবে।
হঠাৎই অতীনের নাকে এলো একটা চেনা গন্ধ। ‘এক্সেলেন্ট’ আফটার শেভ। এটাকেই পারফিউম করে ও অনুষ্ঠান বাঃ আমন্ত্রণে ব্যবহার করে। কিন্তু এমনটা তো কেউ করে না! তাহলে এই গন্ধটা কার থেকে এলো? অতীন ঘাড় ঘোরাতেই লক্ষ্য ক’রলো, ওর বাঁ-পাশে চারটে চাঁপাফুলের মতো আঙ্গুল কয়েকটা সেলোফেন পেপার এগিয়ে ধ’রেছে। আড়চোখে দেখে নিলো অতীন। অতীনের মনে হ’লো, এভাবে একটা অজানা অচেনা মেয়ে যেন একটু ইচ্ছে ক’রেই ওর সাথে ঘনিষ্ঠতা ক’রতে এগিয়ে এলো। তা নয়তো এভাবে আগ বাড়িয়ে কাজে হাত দেবার তো অন্য কোন অর্থ হ’তে পারে না। মনে মনে অতীন ভাবে, এরা কোন বাড়িতে এলো? এ অঞ্চলে তো কোন ফ্ল্যাটবাড়ি গ’ড়ে ওঠেনি। তাহলে কি ভাড়া এলো? ভাড়া তো... কোন বাড়িতে? ওর মনের প্রশ্নের উত্তর যেন মেয়েটাই নিজে দিয়ে দিলো।
--- আমি শ্রীরাধা। আমরা অনুদের বাড়িতে নতুন ভাড়া এসেছি। এসেই দেখছি, বাড়ি’র গোড়াতেই সরস্বতী পুজো হ’চ্ছে। তাই চ’লে এলাম।
অতীন এতোটা আনস্মার্ট নয় যে, একটা মেয়ের সাথে ইন্টারাকশান ক’রতে পারবে না। কিন্তু আজই প্রথম ওর ভাষা-টাশা কোথায় যেন হারিয়ে গেলো! শুধু কোনোরকমে একটু হেসে দিয়ে ব’লতে পারলো,
--- ওয়েলকাম।
সেদিন আর কোনো কথা হয় নি। কথা হয়নি, মানে অতীন কথা হারিয়ে ফেলেছিলো। কেন যে কথা হারিয়ে ফেলেছিলো, তা ও জানে না। মেয়েটা পিঠের কাছে দাঁড়িয়ে। এক্সেলেন্টের গন্ধটা ঘাড়ের কাছে লেগেই র’য়েছে। বাসন্তী রং-এর শাড়িটাও মাঝে মাঝে উড়ে শ্রীরাধা’র উপস্থিতি জানিয়ে দিচ্ছিলো। একটা অস্বস্তি, শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শিরশিরে অনুভূতি অতীন’কে কেমন যেন নার্ভাস ক’রে দিচ্ছিলো। আর কিছু ব’লতে হয় কিনা, ওর জানা নেই। একটা মেয়ের সাথে কীভাবে বিহেভ ক’রতে হয়, কে জানে! তার চেয়ে সেফ্ হ’লো, কিছু না বলা। মেয়েটা কিছু ব’ললে না হয় একটা দুটো উত্তর মেপে ঝুপে দেওয়া যাবে।
কোনো বছর প্যান্ডেলে অতীন তেমনভাবে থাকে না। কিন্তু এবছর একটা অজানা টানে প্যান্ডেলে ও কয়েকবার ঘুরে গেছে।। প্রত্যেকবার দেখতে চেয়েছে, যেন শ্রীরাধা আসে। কিন্তু পর পর তিনবার গিয়েও ওর দেখা পেলো না। আসেনি। সন্ধ্যেবেলা যখন ক্লাবের ছেলেগুলো জলসা’র অনুষ্ঠান করে, সে অনুষ্ঠানে তো মোটে আসেনা ও। হিন্দিগানের আসর জমায় ওরা। এসব একেবারে পছন্দ করে না অতীন। বিশেষ ক’রে বীণাপাণি’র আরাধনায় স্প্যানিশ গিটার একেবারে বরদাস্ত ক’রতে হয় না অতীনের। কিন্তু এবারে সন্ধেবেলা এলো প্যান্ডেলে। কিন্তু না। নো শ্রীরাধা। চলে যাবে যাবে ক’রছিলো, হঠাৎ রিন্টু ওকে দেখতে পেয়ে ব’ললো,
--- কী গো, অতীন দা, তুমি তো এইসব মিউজিক্যাল ফাংশান পছন্দ করো না! তুমি যে?
একবার মনে হোল অতীনের, রিন্টু কি ধ’রে ফেলেছে, কীসের টানে অতীন প্যান্ডেলে এসেছে? কিন্তু না। ওকে তো চুলমাত্র বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাই একটা বিরাট এ্যাক্টিং ক’রে ব’ললো--- খুব খারাপ লাগছে না? এইসব বোগাস অনুষ্ঠান ক’রবি, তার জন্যে চাঁদা নিবি, আর আমরা প্যান্ডেলে হানা দিলে তোদের হাঁপ উঠে যাবে, না? হ’চ্ছে সরস্বতী’র আরাধনা, আর রাত হ’লেই শুরু হবে ‘ইয়ো’ মার্কা মিউজিক!
শ্যামল হঠাৎ জানালো--- ঐ যে নতুন মেয়েটা? ও না দু-বার প্যান্ডেলে এসেছে। একবার তো অঞ্জলি দিয়েছে। তোমাকে খুঁজছিলো।
--- আমাকে? বেশ অবাক হয় অতীন। কথাটা ব’ললো বটে কিন্তু কোথায় যেন একটা ভালো লাগা কাজ ক’রে গেলো। একটা মেয়ে... একেবারে নতুন... তন্বী, সুন্দরী। ওকে খুঁজছে। এর মানে কী হ’তে পারে?
এইভাবে প্রেমে প’ড়ে যায় অতীন। শ্রীরাধা’র প্রেমে একেবারে হাবুডুবু খায়। বলা হয় না কিছুই। শুধু পথে ঘাটে দেখা হয়। একবার দু-বার চোখ তাকাতাকি, দেখিনি-দেখিনি ভাব ক’রতে হয়, তারপর কথা,
--- একদিন আপনার কবিতা শুনবো। কবিতা আমিও লিখি। তবে সে বোধহয় ঠিক কবিতা নয়। কবিতার মতো।
--- তা কেন? লিখুন না। লিখতে লিখতেই তো একদিন লেখা আসবে। অতীন সান্ত্বনা দ্যায়।
--- না না। আমাদের কলেজের প্রফেসর বলতেন, ‘অনুশীলন ক’রে কর্মী হওয়া যায়, শিল্পী হওয়া যায় না। শিল্প জন্মের সাথে সাথে প্রাণের মধ্যে জন্ম নেয়, আপনা-আপনি। বর্ষাকালে দেখবে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত স্থানে নানা রকম ফার্ন গাছ গজিয়ে উঠেছে। কী তার রং! কী তার গড়ন! কিন্তু তুমি তোমার টবে একটা ফার্ন গাছ লাগাতে যাও তো দেখি, পারো কিনা। ও গাছ আপন মনে জন্ম নেয়, আপন মনেই মরে। শিল্প তেমনই। ওটা হওয়া যায় না। ওটা হ’য়েই জন্মায় মানুষ। তা শুধু চর্চায় ধারালো হ’য়ে ওঠে।’ এটা কি আপনি মানেন?
অতীন বুঝে উঠতে পারে না, কেমন প্রশ্নে কেমন উত্তর লাগসই হবে। তাই কোনো দায়িত্ব না নিয়ে বলে--- আসলে আমি তো থিয়োরিটিশিয়ান নই। আমি তো শুধু লিখি। কী লিখি, কে জানে। অতটা তত্ত্বজ্ঞান তো আমার নেই। ওটা অধ্যাপকদের বিষয়। হ’তে পারে।
পরের বছর ক্লাবের ছেলেগুলোকে চম্কে দিয়ে অতীন সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেলে অনেকটা সময় দিয়ে প্যান্ডেলটাকে বেশ বর্ণময় ক’রে দিয়েছিলো। অনেকটা সময় পরিশ্রম ক’রে শুধু অপেক্ষা ক’রেছে, কখন শ্রীরাধা প্যান্ডেল দেখতে আসবে। কিন্তু এলো না। পুজোর দিন। একটু ব্যর্থ মনোরথ হ’য়ে প্যান্ডেলে ‘বৃথা আশা মরিতে মরিতেও মরে না’ ব’লেই থুম্ মেরে ব’সেছিলো। এরা সব বাচ্চা-কাচ্চা। এদের কাছে তো বলা যায় নয়া, ‘শ্রীরাধা আসেনি কেন রে? যা তো, গিয়ে দেখে আয় তো।’ বিল্টু তো সোজা এসে অতীন’কে একবার ব’লেও দিলো,
--- তুমি কোথায় ছিলে, অতীন দা? ঐ যে নতুন মেয়েটা... শ্রীরাধা...? তোমার কথা জানতে চাইছিলো।
--- জানতে চাইছিলো মানে? আমি কি সাস্পিশাস মানুষ নাকি?
--- না না। তুমি প্যান্ডেলে এসেছো কিনা, খোঁজ নিচ্ছিলো। আমি তো বললাম, অতীন দা পুজো-টুজো’তে তেমন আসে না।
কথাটা শুনে হেসে দিলো অতীন। মনে মনে ও নিশ্চিত হলো, শ্রীরাধা’র সাথে দেখা হলেই ও ব’লে ব’সবে, ‘আপনি কি কমিউনিস্ট? পুজো-টুজো নাকি তেমন পছন্দ করেন না? কিন্তু এখন বিলটু’কে একটা ধমক দিতে হবে। তাই ব’ললো,
--- বাঃ! বেইমান। আমি আসি না? তাহলে মণ্ডপ’টা সাজায় কে রে? তোর ঠাকুরদা? তারপরই একেবারে ছোটদের মতো অতীন হঠাৎ বিল্টু’কে ভেঙ্গিয়ে বলে--- তুই ব’লতে গেছিস কেন ‘অতীন দা তেমন পুজো-টুজো’তে আসে না?’ তুই কি আমার পি.এ. নাকি?
মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন--- শ্রীরাধা অতীন’কে খুঁজেছিল কেন? সেটা কি এমনিই? টুক ক’রে ওদের বাড়িতে গিয়ে কি একটা নাটক মতো ক’রে প্রশ্ন করা সঙ্গত হবে, ‘আপনি আমায় খুঁজছিলেন?’ নাকি ঐ খোঁজাটা নিছক একটা প্রশ্ন মাত্র? এর জন্যে পাড়া’র কোন নবাগতা’র বাড়িতে ঠেলে গিয়ে জানতে চাওয়াটা কি বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়? অতীন তো আর বাচ্চা ছেলে নয়। দুম্ ক’রে না ভেবে কোনো কাজ করাটা কি ভদ্রতা হবে? শ্রীরাধাও কি ওকে কিছু ব’লতে চায়? চাইলে কি ও যা চায়, তাই-ই ব’লতে চায়? একটু অগ্র-পশ্চাৎ না ভেবে কাজ করার মতো বয়সও ওর নয়। পাড়া’তে সে পোজিশনও নয় ওর। একজন চাকরীজীবী’র একটু দাম তো পাড়াতে বাড়েই।
হঠাৎ শ্রীরাধা প্যান্ডেলে এলো। ও দেখতে পায়নি অতীনকে। অতীন দেখলো, ওর দু-চোখ লাল টক্টকে। মনে হয়, জ্বর-টর কিছু হ’য়েছে। নাকি কোনো অজ্ঞাত কারণে কান্নাকাটি-টাটি ক’রেছে। কিন্তু একটা মেয়েকে দুড়ুম ক’রে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করাটা ভব্যতা’র মধ্যে পড়ে না চেপে গেলো অতীন। তা না হ’লে লোকে ব’লবে ‘শিভালরি’র অভাব।’ শ্রীরাধা প্যান্ডেলে এসে যখন বিল্টু’দের সাথে কী একটা কথা ব’লছিলো, অতীন টুক্ ক’রে অন্তরালে স’রে গেছে। দেখে নিতে চেয়েছে, শ্রীরাধা সত্যিই ওকে খুঁজছে কিনা। অন্তরাল থেকে পরিষ্কার দেখলো অতীন, বিল্টু নিজের হাত নেড়ে নেড়ে কী একটা দেখাচ্ছিলো মেয়েটাকে। মেয়েটা সেই সেই দিকে একবার ক’রে গেলোও। তারপর হঠাৎ নিজের বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো। অতীন স্পষ্ট অনুমান করে নি’লো, তাহলে সত্যি সত্যি শ্রীরাধা ওকেই খুঁজছিলো না। ওটা ছিল একটা কথা’র কথা। কিন্তু যে কথাটা অতীন শ্রীরাধা’কে ব’লবার জন্যে একটা মানসিক বল আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলো, সেটা আর বলা হোল না। নিজের মনেই ভাবলো, এতো ব্যস্ত কী? হবে।
কিন্তু যা বলা হয় না, তার জন্যে চিরকাল একটা আফশোষ যে থেকে যেতে পারে, তা হয়তো জানে না অতীন। শিভালরিটা যে বড়ো কথা নয়, মনের চলাচলটাই আসল--- এসব হয়তো ওকে কেউ শেখায়নি। কিন্তু সময় ব’সে থাকে না। সে তার আপন গতিতে চ’লতে চ’লতে নানা ঘটনা’র জন্ম দ্যায়। সেই ঘটনাগুলোকেই হয়তো মানুষ বলে ভবিতব্য, নিয়তি বা ভাগ্য। কিন্তু আসলে তা তো পরিণাম মাত্র। নিছক কর্মফল, যাকে কেউ ব্যাখ্যা ক’রে বলে ‘পূর্বজন্মকৃত ফল’। সেই নিয়তি-ই ঠিক এর একদিন পরে অতীনকে মুম্বাই নিয়ে গেলো তিনমাসের একটা ট্রেনিং-এ। অফিসই পাঠালো। যাবার কথাটা আগেই ছিলো। বাড়িতে বিধবা অসুস্থা মায়ের দোহাই দিয়েও পার পেলো না অতীন। এই যাবার আগে একটা বোঝাপরা ক’রতে চেয়েছিল শ্রীরাধা’র সাথে। হ’লো না। সুতরাং বাড়িতে রান্না’র মহিলাটিকে রেখে প্রচুর দুশ্চিন্তা নিয়ে সে দেশান্তর হলো।
যেদিন ফিরলো, সেদিন অনু’দের বাড়িতে সানাই বাজছে। বিরাট ক’রে প্যান্ডেল হ’য়েছে। হ’তেই পারে। অনু’র তো বিয়ে হ’য়ে যেতেই পারে। সে তো সময়ের গতিতে ছোট্ট মেয়েটি হ’য়ে থেমে নেই। নিঃশব্দে বড়োটি হ’য়ে গেছে। তাছাড়া সকলে তো আর তাদের ছাব্বিশ বা সাতাশ বছর বয়সে মেয়ে বিয়ে দেবে, এমনটা ভেবে ব’সে থাকে না।
বাড়িতে ঢুকতে যাবে, হঠাৎ পাড়া’র টুব্লু ডেকে ব’সলো--- অতীন দা, তুমি নাকি মুম্বাই গেছিলে? শুনলাম।
--- আর ব’লিস না। অসুস্থ মা’কে ফেলে চাকরী বাঁচাতে কাটিয়ে এলাম এক নব্বই দিন। জানি না, আমার বুড়ি কেমন আছে। ফোন ক’রলে তো বলে, ‘তুই ভাবিস না। রান্না’র দিদি আছে। এরপরই একবার কনফার্ম ক’রতে প্রশ্ন ক’রে বসে--- হ্যাঁরে, অনু’র বিয়ে হ’য়ে যাচ্ছে এর মধ্যেই?
অতীনকে পথে ব’সিয়ে দিয়ে টুব্লু জানালো--- অনু’র বিয়ে! কে ব’ললো? অনু নয়, অতীন দা। ও তো শ্রীরাধা’দির বিয়ে।
--- শ্রীরাধা! কী ব’লছিস! তুই শিয়োর?
--- আমি শিয়োর তো বটেই। সকলেই শিয়োর। অনু তো দিব্যি ড্যাং ড্যাং ক’রে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিয়ে হ’লে কি ঘুরে বেড়াতো?
অতীনের গোটা শরীরটা নাড়া দিয়ে গেলো টুব্লু’র এসব এলোমেলো কথাগুলো। তাহলে কি মানুষ যা বলে, সে সব সত্যিই বাস্তব কথা? মেয়েরা এমনটাই হয়? কুমারী বয়সে একে তাকে সোজাসুজি অথবা আকারে ইঙ্গিতে ঘায়েল করে, আর পরে একদিন বাবা-মা’র বাধ্য মেয়েটির মতো অনেক বেশী প্রতিষ্ঠিত অন্য একটা পুরুষের হাত ধ’রে বিয়ের পিড়ি’তে গিয়ে বসে? ওদের মন কি নিজের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা’র ঘেরাটোপেই ঢাকা? সেখানে অনুভূতি ব’লে কি কিছুই নেই? শ্রীরাধা’কে দেখে তো এমনটা মনে হ’য়েছিলো না। যদি সে এমনটা না হ’য়ে থাকে, তবে অতীনে’কে এভাবে পরোক্ষ টানে বাঁধলো ক্যানো? কথাটা মনে আসতেই আবার এটাও মনে এলো, না, ও তো তেমন কোন ইঙ্গিত অতীন’কে সত্যিই দ্যায় নি। একটা মেয়ে কি একটা ছেলেকে একটু বেশী প্রেফারেন্স দিতে পারে না? তাকে তার কি একটু বেশী ভালো লাগতে পারে না? তার মানে সেটাকেই তো অতীনের প্রেম ধ’রে নেওয়াটা উচিত হয়নি। আজ নিজেকে বড়ো অপরাধী মনে হ’তে থাকে অতীনের। মনে মনে বেশ বোঝে যে, ও একটু বেশী মাত্রায় মেয়েটার সৌন্দরযে আপ্লুত হ’য়ে প’ড়েছিলো। জীবনে প্রেমের পক্ষে এতোটা লেট আওয়ারসে এতোটা আপ্লুত হওয়াটাই ওর বোকামি হ’য়েছে। শ্রীরাধা ওর থেকে বেশ খানিকটা ছোটই হবে। একটা ছোট মেয়ে সম্বন্ধে...।
তবে ঘুরে ফিরে একটা কথা নিজেকে বোঝাতে বেশ সমর্থ হোল অতীন যে, মেয়েটা ওর দিকে ঝুঁকেছিলো। পলকের জন্যে হ’লেও এটা সত্যি। ওর চোখে সেই দৃষ্টি ছিল। অতীন ভুল দ্যাখেনি। ও তো আর মেয়েদের প্রতি ছোঁকছোঁকে নয়। বরং মেয়েদের ব্যাপারে বেশ একটা ছুতমার্গ ওর ছিলো। তবে আজ আর সে কথা ভেবে লাভ নেই--- এমন সান্ত্বনা নিজেকে দিয়ে শরীরের ক্লান্তি আর মনের এই ভার’কে টেনে বেশ খানিকটা ঝুঁকে প’ড়ে বাড়িতে ঢুকতে যাবে, এমন সময় বিলটু সামনে আবির্ভূত।
--- অতীন দা, তুমি এতদিন পরে এলে!
--- এতদিন পরে এলাম, মানে? কোন এতদিন? একটা অজানা আশঙ্কা ধাক্কা দিয়ে যায় অতীনকে।
--- তুমি কি কিছুই জানো না, কিছুই বোঝোনি?
--- কীসের কথা ব’লছিস? একটু স্পষ্ট ক’রবি, নাকি আমাকে সাসপেন্সেই ঠেলে দিবি?
--- আমি শ্রীরাধা দি’র কথা ব’লছি। তোমাকে যে সে চাইতো, সেটা কি তুমি বুঝতেই পারোনি?
--- বুঝবো কী! সে তো কোনোদিন আমাকে বলেনি।
ভুলে যায় অতীন যে, বিলটু ওর সমবয়স্ক নয়, বন্ধু নয়, এমনকি সম-সামাজিক অস্তিত্বেরও নয়। আজ যেন একেবারে আপন অস্তিত্ব ভুলে গিয়ে অতীন নিতান্ত অভিযোগের সুরে ব’ললো কথাটা। ভুলে গেলো, একটা মেয়ের পক্ষে এভাবে এ কথা বলাটা কতটা সম্ভব, কতটা অসম্ভব। কিন্তু বিলটু যা শোনালো, সেটা অতীনকে মোটে শান্তি দিলো না।
--- তুমি কেন বলোনি? তুমি কি জীবনে কিছুই ক’রবে না, অতীন দা? কিছুই বুঝবে না? সরস্বতী পুজোর দিন, তুমি প্যান্ডেলে এসেছিলে। সেই সময় হঠাৎই শ্রীরাধা দি একবার প্যান্ডেলে আসে। বাড়িতে বাবা বিয়ের জন্যে হেভি চাপ দিচ্ছিলো। সেদিন শ্রীরাধা দি বিরাট ঝামেলা গণ্ডগোল ক’রে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলো তোমার সাথে একটা বোঝাপড়া ক’রে নিতে। আমাকে এসে ব’ললো, ‘তোমাদের অতীন দা কোথায় গো?’ যদিও আমরা গোটা ব্যাপারাটা তখন তো জানতাম না। মানে তোমার সাথে তার কতটা কথা হ’য়েছে... আর কি। কিন্তু তোমাকে কত খুঁজলাম আমরা! তুমি এই ছিলে, এই নেই। একেবারে ধাঁ। ভ্যানিশ। তার একদিন পরেই তো তোমার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি, তুমি সোজা মুম্বাই...।
--- তোদের কী মনে হয়? আমাকে ও কী ব’লতে এসেছিলো?
এবারে যেন কোনো অবুঝ ছেলেকে বোঝাতে বাধ্য হ’চ্ছে, এমন একটা অস্বস্তি’র মুখভঙ্গি ক’রে বিলটু ব’ললো--- তুমি কি জানো না, শ্রীরাধা দি তোমাকে ভালোবাসে? তুমি কি এসব কিছুই বোঝো না? কী গো তুমি!
একবার অতীন ভাবে, বিলটু বোধহয় ওকে ব’ললো ‘তুমি কি গাড়ল’। ব’লতেই পারে। সত্যিই তো এক্ষুণি নিজেকে একটা ‘জ্যান্ত গাড়ল’ ব’লেই মনে হ’চ্ছিলো অতীনের। সেদিন কেন যে বড়ো চালাকি ক’রে লুকিয়ে প’ড়তে গেলো? অন্তরাল থেকে শ্রীরাধা’কে দেখে পুরোটা ভুল বুঝে আজকে পস্তাতে হ’চ্ছে। কিন্তু সে তো মোটে তিনটে মাস আগের ঘটনা। এর মধ্যে বিয়ে কী রকম? এই প্রশ্নটা শ্রীরাধা’র বাবা’কে না ক’রে অতীন হাতের কাছে পাওয়া বিলটুকেই ক’রে বসে,
--- এই তিন মাসেই বিয়ে! এ তো ‘ওঠ্ ছুড়ি তো বিয়ে!’ এটা কী ক’রে হয়? আর আজকের দিনে এভাবে জোর ক’রে বিয়ে মানে?
--- সবাই তোমার মতো নয়, অতীন দা। যেদিন শ্রীরাধা দি মা’কে একটু ছোট ক’রে তোমার কথাটা জানিয়েছিলো, সেদিন থেকে চুপচাপ ওর বাবা সম্বন্ধ দেখতে শুরু করে। গোটা নিগোশিয়েশন সাজিয়ে নিয়ে সরস্বতী পুজোর দিন শ্রীরাধা দি’কে জানাতে শ্রীরাধা দি প্রটেস্ট ক’রেছিলো। তাই চট্জলদি এই ব্যবস্থা।
কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে অতীন অনুদের বাড়িটার দিকে। মনে পড়ে, শ্রীরাধা’কে নিয়ে কয়েকটা স্বপ্ন ও একা একা দেখেছিলো। কিন্তু এইমাত্র ‘ঘরেতে এলো না সে তো, মনে তার নিত্য যাওয়া-আসা।...’ অনু’দের বাড়িটা আলোয়, সানাইয়ে, লোকজনের ছুটোছুটিতে মেতে উঠেছে। তার মধ্যে শুধু বেমানান সানাইটা’র এই বেদনাদায়ক শব্দ। আসলে শব্দ তো নয়। যে রাগে সানাইটা বাজছিলো, সেই রাগটাই বেদনা’র রাগ। জউনপুরী। কিন্তু অতীন জানে না, বেদনা জউনপুরী রাগেও ছিলো না, ছিলো মনে। পরিষ্কার দেখতে পেলো অতীন, এর মধ্যে চোখের জলে বন্দিনী রাজকন্যা’র মতো ব’সে আছে শ্রীরাধা। শ্রীরাধা’কে মুখ ফুটে বলাই হলো না, ‘আমি তোমাকে চাই।’ সে তো মেয়ে। সে কীভাবে ব’লবে এ্যাতো বড়ো কথাটা! এটা তো বলা’র কথা পুরুষের। যুগের পর যুগ তো তাই হ’য়ে আসছে। দু-জনেই মনে মনে জানলো যে, তারা একে অপরকে চায়, কিন্তু বলাই হোল না। ব’লি ব’লি ক’রে কেটে গেলো দুটো বছর।
ঘরের দিকে পা বাড়াচ্ছিলো অতীন। মায়ের ডাক শোনা যাচ্ছিলো--- কে রে? অতীন এলি?
উত্তর দিতে ইচ্ছে ক’রছিলো না মোটে। ভালো লাগছিলো না কিছু। বিলটু বা টুবলু’কে কিছু বুঝতে না দিয়ে ক্লান্ত পায়ে ঘরের দিকে পা বাড়াতে মনে পড়লো, এভাবে তো ওকে ভেঙ্গে প’ড়লে চ’লবে না। ওর জীবনে শ্রীরাধাই তো একমাত্র নয়। মা’কে ইনসুলিন দিতে হবে। আজ থেকে তো কম্পাউন্ডারটি আসবে না। তেমনিই তো কথা। দায়িত্ব এবার তো ওর, যেমনটা ছিল নব্বইটা দিন আগে। ঘরে ঢুকে গেলো অতীন। বন্ধ হয়ে গেলো ওদের দরজা।
-----------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন