মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১১

'হৃদয়ের ভাষা' ছোটগল্প

হৃদয়ের ভাষা

হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়


রনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই আসতেই হলো এ দেশে। দাদা অমূল্যধন বলেছিলেন,
--- তুই ওই দূর দেশ থেকে ঠেঙ্গাতে ঠেঙ্গাতে কেন আসতে যাবি! তুই একটা পাওয়ার দিয়ে দে আমাকে। আমি তোর ভাগেরটা তোর এ্যাকাউন্‌টে ফেলে দি। তারপর তুই যা করার, তা করিসখন।
রণজিৎ কিন্তু দাদাকে বলেছে--- না না দাদা। তোমার বয়স হয়েছে। এই সময় কোর্ট-কাছারির গোটা দায়িত্ব কেউ তোমার ছেড়ে দেয় নাকি!
আসলে রণজিৎ বাবু দাদাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। এতোগুলো টাকার ব্যাপার। দাদার মস্তিষ্ক যদি ঘুরে যায়? জমিজমা-বাড়ি ভাগাভাগি যা কিছু হবে, তাতে তো তাঁরও একটা মতামত থাকা দরকার কেননা ভাগ তো তাঁরও আছে। না হয়, ও দেশে ওঁদের পিতৃপুরুষের যে প্রাচীন আবাস, সে সব একাই ভোগ করছে ছোটভাই। কিন্তু সেই জমি-বাড়ি নিয়ে যদি সে কিছুমাত্র মালিকানা পরিবর্তনের কথা ভাবে, মানে বিক্রীবাটা করতে চায়, তবে তাকে তো দাদারও মত নিতে হবে। সে বসবাস করছে, ঠিক আছে। কিন্তু তার জন্যে সে সবের তো মালিক সে একা হয়ে যেতে পারে না। ঠিক তেমনটাই এখানকার জমি-বাড়ি দুই ভাইয়ের সম্পত্তি আজ। বাবা সেই কোনকালে এখানে বেশ কিছু জমি কিনে কিনে রেখেছিলেন, বাড়ি করেছিলেন। তিনি বসবাস করতেন বাংলাদেশে কিন্তু বড়ো ছেলে অমূল্যধনকে পাঠিয়ে দিয়েলেন এখানে। বাবার ইন্ধনেই এখানে আসেন অমূল্য বাবু। এখানেই তাঁর পড়াশুনো, চাকরী, উন্নতি। মনে মনে মানেন অমূল্যধন যে, তাঁর দেশ বাংলাদেশ হলেও এ দেশ তাঁকে অন্ন দিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে এবং মাতৃক্রোড় দিয়েছে। শুধু তাঁকেই দিয়েছে কেন ভাবা? অমূল্যধনের মতো বাংলাদেশের অনেককেই দিয়েছে। এক পা ও দেশে আর এক পা এ দেশে দিয়ে বেঁচে আছে অনেকে। মনে মনে তিনি বাংলাদেশি কিন্তু তাঁর জীবনে জল-ধান-মাটি প্রায় গোটাটাই এ দেশের।
অমূল্য অনেকটা দায়ে পড়েই এ দেশ ও দেশরতে চান না। মন কী বলে, আজ আর তার উত্তর খোঁজেন না তিনি। কিন্তু এটা সত্যি বলে মানেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে শুধু মুক্তিযোদ্ধারা নয়, এ দেশের জওয়ানদের একটা বিরাট অবদান আছে। অবদান আছে এ দেশের সরকারের। এটা নিয়ে, অর্থাৎ এ দেশের সরকারের তৎকালীন এই ভূমিকাগত উদ্দেশ্য নিয়ে যে তর্ক থাক না কেন, কথাটা তো সত্যি। সে সময়ে সবচেয়ে বড়ো সাপোর্ট দিয়েছিল ইন্ডিয়া। শুধু সে সময় কেন? বাঙ্গলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু সাহেব খুন হলে তিনি যে ধর্মনিরপেক্ষ একটা বাংলাভাষা কেন্দ্রিক দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন আর তাঁর দেশের মানুষকে দেখাতে চেয়েছিলেন, তা তাঁর দেশের মানুষ যখন ভুলে গেলো, সে দেশ হিন্দুধর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকে রূপান্তরিত করলো, তখন এই দেশই তো ওদেশ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার বাংলাদেশীকে আশ্রয় দিলো। তার মধ্যে পড়েন স্বয়ং অমূল্যধন বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা লোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মধ্যে মেধা দেখে, আর ও দেশে উন্নতিতে বার বার অন্তরায় সৃষ্টি হবে জেনে অনেক বাঙ্গালীর মতো নিজের একেবারে ছোট, মাত্র ক্লাশ এইটে পড়া ছেলেকে জয় মা ভবতারিণীলে কপাল ঠুকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এ দেশে। ভরসা করলেন, এ দেশে বসবাসকারী পুরনো বন্ধু কালীচরন চট্‌টোপাধ্যায়কে। তারই পরিচয় নিয়ে এখানে মেস করে থেকে অমূল্যধন পড়াশুনো করেছেন, নাগরিকত্ব নিয়েছেন, এ দেশের মেয়ে বিয়ে করেছেন, স্ত্রী-ও সন্তানাদিদেরকে নিয়ে সরকার নির্‌বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। আজ আর তাঁকে কেউ বাংলাদেশি বলে না। তিনি ভারতীয়, তিনি সম্ভ্রান্ত।
ও দেশে যে জমি বা বাড়ি আর বিক্রি করা যাবে না, তা জেনেই বাবা লোকনাথ এ দেশে রানাঘাটে সেই বন্ধু কালীচরনকে কেন্দ্র একটু একটু করে জমি কেনেন, এবং শেষে নিজেই এক সময় পাকাপাকিভাবে এখানে চলে আসেন বড়ো ছেলের কাছে। বহুকাল মন তাঁর পড়ে ছিল সেই তথাকথিত স্বদেশে, যা তাঁর কাছে বিভূঁই মাত্র ছিলো। কিন্তু পরে মাঝে মাঝে মনে হয়েছে--- এই দুই দেশের মধ্যে যেন কোন বিভেদ নেই, বৈষম্য নেই। একই ভাষা, একই খাদ্য, একই মানুষ এই দুই দেশে। পার্‌থক্য শুধু একটা বইয়ের, যার নাম সংবিধান। আর পার্থক্য কাঁটাতারের এবং নো ম্যান্স ল্যান্ডএর। ব্যস। যে কোনো দেশেই বেঁচে থাকা যায়, যে কোনো দেশেই মরা যায়। একই মা-এর দুই ক্রোড়। একটা সময় তো একই দেশ ছিল।
নেই নেই করে লোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দেশে খুব কম জমি করেননি। আজ আর তিনি নেই। এবারে তার ভাগ-বাটোয়ারা করার সময় এসে গেছে। অমূল্যবাবু শুনেছেন, বাবাকে নিয়ে সনজিত চলে যাবে নিউজার্সিতে। ওখানেই ওদের পাঁচ বছরের বাস। ওরা আর এ দেশে ফিরবে না। জানেন অমূল্যধন যে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে, নতুন বাংলাদেশ গড়া ভুলে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে তো অনেকেই চলে গেছে অস্‌ট্রেলিয়ায়, জার্মানি-তে, ইউ.এস.এ-তে। সনজিতও তাই। ও দেশ থেকে বিদেশ যাবার জন্যে একটা যেন তাড়াহুড়ো পড়ে গেছে। একটা ইঁদুর দৌড়। কে আগে নিজের ছেলে বা মেয়েকে পাঠাতে পারে বিদেশে। পড়াশুনোয় একটু ভালমন্দ ফল করতে পারলে বা কোনো না কোন টেকনিক্যাল বা টেকনোজিক্যাল কোর্স করে ফেলতে পারলেই দৌড়। গোটা তৃতীয় বিশ্ব জুড়ে ব্রেনড্রেন চলছে। ওখানে যাবে, ওখানেই একজন নিজের ধর্ম-এর, এমনকি না পেলে একটা সাদা  মেয়েকেই বিয়ে করবে। এরপরেই তাদের ছেলেমেয়ে হবে হাফ সাদা, হাফ কালো। তারা ফটর-ফটর করে ইংরেজি বলবে। ওরা বাংলাভাষাই জানবে না। না হবে এ দেশি, না বিদেশি। একটা ট্যাঁশ প্রজন্ম হয়ে বেঁচে থাকবে। পদবী থাকবে সেই বাংলার বারুজ্জে বা চাটুজ্জে, কিন্তু নাম হবে জ্যাক্‌স বা মেরি। এসব ভালো লাগে না অমূল্যধন বাবুর। তিনি তাঁর কোনো ছেলেকে পাঠাননি সেখানে। অবশ্য তারাও কেউ এখানে নেই। এই দেশের মধ্যেই নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গে নাকি কোনো কাজ নেই? ডেকে পাঠালে তবে তারা আসে। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদেরকে ডাকতে হবে না, আর তাদের ইন্টারেস্টও নেই এই সম্পত্তিতে।
অমূল্যধনের ছোটভাই রণজিৎ আজো বাংলাদেশে আছে। সেখানে ডাক্তারি করেই সে বেশ পশার জমিয়েছে। ডাক্তারি মানে হাতুরেগিরি। বাবা ডাক্তার ছিলেন বলে সেইটাই অবলম্বন করেছে সে। গ্রামের ডাক্তার। লোক ঠকিয়ে ভালমন্দ উপার্‌জন। একমাত্র ছেলে সনজিত-কে সে পাঠিয়েছে নিউ জার্সিতে। সেখানে একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে সে কাজ করে। সনজিত সেখানেই বিয়ে করেছে একটি ভারতীয় তথা বাঙালি বংশোদ্ভূত পরিবারের মেয়েকে। নাম এমিলি। সেখানেই সে বর্ন এ্যান্ড ব্রট আপ। সে-ও সার্ভিস করে। ভারতবর্ষের মুখটুকু সে দ্যাখেনি। ওদের একটি ছেলে। তার নামও বিদেশি বিদেশি। পিটার। কোনো সন্দেহ নেই যে, রনজিতের ছেলেটি লেখাপড়ায় যেমন ভালো ছিলো, তেমনি সে বৈষয়িক। বিদেশে সে গেছে তো মুখ দেখিয়ে নয়। বিদেশ ওকে ডেকে নিয়ে গেছে তাদের প্রয়োজনে। পৈত্রিক জমি-জায়গা বিক্রিবাঁটা যে হবে, তার প্রতিও সনজিতের আকর্ষণ ছিল সমান। সে মনে করে, অর্থ কারোর কখনও চাহিদাতীত হয় না। তাছাড়া সনজিত লেখাপড়াটাই শিখেছে, মনটা পড়ে আছে ওর বাবারই মতো ছোট ছোট বিষয়ে।
এবার বাবা ছেলেকে বলেছিলেন--- তুই আর শুধু শুধু সাত সাগর তেরো নদী পেরিয়ে আসিস না। আমি ম্যানেজ করে নেবোখন।
কিন্তু নিস্পাপ কণ্ঠে সনজিত বলেছে--- না বাবা। তোমাকে কোনো ভরসা নেই। তুমি হয়তো জ্যাঠামশাইকে দেখেই আবেগে গলে পড়বে। জ্যাঠামশাই সংস্কৃতে যেই দুর্গাপুজোর মন্ত্র-ফন্ত্র বলবে, অমনি তুমি কাৎ।
ফলে এই সম্পত্তিগত বিষয়ে সে তার বৌ-বাচ্চাকে ইন্ডিয়া দেখাবার নাম করে একবার ঘুরে যেতে এসেছে এখানে। সমস্ত বিষয় সম্পত্তি নিজে চোখে বুঝে নিতে চায় ও। অমূল্যধন বেশ বোঝেন, তাঁর ভাইপো শুধু তাঁকে কেন, নিজের বাবাকে পর্‌যন্ত বিশ্বাস করে না। তার জ্যাঠামশাই যে তাঁর ছোটভাইকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে, শুধু এমনটাই নয়। বাবাও যে কোনো দুর্‌বল মুহূর্তে তার দাদার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, সে সন্দেহও তার মনে ছিল। ছোট্ট ঘর ছেড়ে সে বৃহৎ বিশ্বে মিশে যেতে বেরিয়েছে বটে, কিন্তু বিশ্বায়নের অর্থনীতি তাকে এক সঙ্কীর্ণ আর্থবন্ধনে বেঁধেই রেখেছে। মনটাকে সে বৃহৎ করতে পারেনি। তার এই মধ্যপন্থা তাকে এক বিরাট শিক্ষা দিলো অবশেষে। শিক্ষা সে কতটা গ্রহণ করেছে, তা জানা না গেলেও তার বাবা-মা যে মোক্ষম শিক্ষা পেলো, সেটা নিশ্চিন্তে বলা যেতে পারে।
রণজিতের ছেলে দেশের বাইরে গেলেও তার বাবা-মা যে সেই বাংলাদেশের এঁদো গাঁয়ের মানুষ, এমনটা সে মনে রাখেনি। আর সেটাই যে একটা বিপত্তি ঘটাতে পারে, এমনটা ধারনা তার হয়ওনি। এদিকে সনজিতের মা ছেলের বিদেশ বসবাসে গদগদ। ছেলে তার কট মট ইংরেজি বলা মেয়েকে বিয়ে করেছে, নাতিও ঠা-ঠু করে ইংরেজি বলে টেলিফোনে, তাতে দস্তুরমত অহংকারই ছিল সনজিতের মা-এর। বাবারও সেই গর্ব কম নয়। এই ফাঁকে বাড়ির অন্য মানুষদেরকে তা দেখাবার একটা বাসনাও রণজিতের স্ত্রীর মনে ছিল। সেই ছেলে, পুত্রবধূ আর নাতি এলো এখানে। কিন্তু মনটা তার ভেঙ্গে গেলো প্রথম দর্শনেই। শ্বশুর-শাশুরির সামনে জেটল্যাগ কাটিয়ে ওঠার আগেই তারা সনজিতকে তাড়া দিলো দ্রুত স্টেটসে ফিরে যাবার জন্যে। তাদের ভাষা রনজিতের স্ত্রী নিজে পুরো বুঝতে না পারলে কী হবে, হাবেভাবে বুঝলো। অবশ্য এই বুঝতে না পারাটাই যে বিরাট গর্বের, তা বারংবার অপরকে বুঝিয়ে দিতে রণজিতের স্ত্রী কসুর করেনি। কিন্তু দেখাবার মতো তেমন মানুষও তো এখানে নেই, তা স্মরণে ছিলো না তার। অমূল্য বিপত্নীক। আজ সাত বছর সে গত হয়েছে। তাই যাবতীয় সম্পত্তি ভাগাভাগি করে দিয়ে অমূল্যধন এবার বেরিয়ে পড়বেন তীর্থের উদ্দেশে। তার আর তো কোন টান এখানে নেই। কার জন্যে আর এখানে থাকা!
সনজিত বাবাকে সাথে করে জ্যাঠামশাইয়ের সাথে রওয়ানা দ্যায় রানাঘাটে। সেখানেই বিস্তর জমিজমা তাদের। খদ্দের, উকিল এবং কাগজ-পত্র সবই ঠিকই করে রেখেছেন অমূল্যধন। শুধু কোর্টে যাও, সই-সাবুদ করো। ব্যস্‌। যাবার সময় নিজের স্ত্রীকে সাবধান করে দিয়ে গেছে সনজিত, সে যেন তার শাশুড়িকে চোখে চোখে রাখে। বিশেষত এই দেশ পরিবর্তনে, আর জলবায়ু পরিবর্তনে হাঁফানি নিয়ে সে বেশ কাবুই হয়ে এসেছে এ দেশে। কিন্তু বিদেশে তো শ্বশুর-শাশুড়ি প্রথা তেমন গভীর নয়। সে সংস্কৃতি তাদের নেই। সেখানে তো সকলেই স্বতন্ত্র, স্বাধীন। বিশেষত ওরিজিনের থেকে অনুকরণকারীদের বৈদেশিক ঠাট-বাঁট বেশী মাত্রায়ই থাকে। সনজিতের মা তার পৈত্রিক রোগ হাঁফানি পেয়েছে শতকরা একশ ভাগ। বারোমাসের মধ্যে সে আট মাসই পড়ে থাকে বিছানায়। ইনহেলার, নেবুলাইজার নানা ব্যবস্থা করতে হয় নানা সময়। তবু তাকে নিয়ে আসতে হয়েছে এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে। সম্পত্তি এমনই গেঁড়ো। যথেষ্ট থাকলেও মানুষ তার হক্কের প্রাপ্য ছাড়বে না।
কিন্তু বিধি বাম হলে কে তা থেকে রেহাই পায়! রণজিৎ বেরিয়ে যাওয়ার পরই তার স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়। তার শ্বাসের টান ওঠে ভয়ঙ্কর। কিন্তু সদ্য এ দেশে আসায় লাগেজের কোথায় তার ইনহেলার আছে, সে সময় সে হুস তার থাকে না। সে তার পুত্রবধূকে বার বার বলতে থাকে ইনহেলারের জন্যে। কিন্তু গেঁয়ো মহিলা মনে রাখতে পারে না যে, সেটার নাম ইনহেলার। তাই সে তার মতো বলে,
--- বৌমা, আমার ফিচ্‌কারিডা দ্যাও দেহি। আমার তো শ্বাস ওডে (ওঠে)।
কিন্তু তার সাধের বৌমা এ্যাস্থমার পেশেন্‌ট জীবনে দ্যাখেনি। তার শাশুরির কী যে রোগ, তা সে ধরতেই পারে না। শাশুড়ি কী যে চাইছে, তাও সে বুঝতে পারে না। সে বার বার জানতে চায়--- হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্‌ট, মম্‌? প্লীজ মেক ইট ক্লিয়ার। আই জাস্ট কান্ট গেট ইউ।
--- ফিচকারি! ফিচকারি!! বোঝো না? শ্বাসকষ্টের ফিচকারি।
অগত্যা নাতির কাছে আবেদন জানায় সে। কিন্তু নাতি তার মাকে বলে--- মম, ডিস ওল্ডি ইস হাংগ্রী। প্লীজ গিভ হার ফুড।
বার কয়েক চেষ্টা করে শাশুড়ি বিফল হয়ে ক্ষিপ্ত হয় তার শখের ইংরেজি বলা পুত্রবধূর ওপর। যত সে ক্ষিপ্ত হয়, ততই তার উত্তেজনা বাড়ে আর বাড়ে শ্বাসকষ্ট। শখের ইংরেজি যে এবার তার প্রাণনাশের কারণ হচ্ছে, তা সে হাড়ে হাড়ে টের পায়। পুত্রবধূ উন্নত দেশের বাসিন্দা। ওরা এ দেশের মতো সেলুলার ফোন ব্যবহার করে না। ফলে সনজিতকেও কোনো মেসেজ দেওয়া সম্ভব হয় না। এদিকে ক্রমশ সনজিতের মা-এর অবস্থা সঙ্গিন হতে থাকে। অবশেষে এমন পরিস্থিতি ঘটে যে, পাড়ার মানুষ ডেকে তাকে হাসপাতালে দিতে হয় এবং নানাভাবে প্রচেষ্টা করে যোগাযোগ করা হয় কোর্টে। সংবাদ পান অমূল্যধন বাবু। তাঁরা ফিরে এলে একটু সুস্থ হয়ে একটাই কথা বলে রণজিৎ বাবুর স্ত্রী,
--- আমি অগো লগে বিদেশে যামু না গো। আমাগো ঐ ফটর ফটর ইংরাজি কওয়া দেশে যাইয়া কাম নাই। ওরা আমাগো বাসা (ভাষা) বোজে (বোঝে) না। তুমি আমারে দ্যাশে নিয়া চলো। এসব সম্পত্তি থাউক। দাদা যা করনের করবেন হ্যানে। আমরা ফিরা যাই। চলো, আমরা ফিরা যাই।  

-----------------

কোন মন্তব্য নেই: