মমতা
হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়
আমার এনজিও-টির নাম Street Illiterate
Salutary Organization। সকলে ছোট ক’রে বলতো ‘শিশো’। এই ‘শিশো’ শব্দটি কালের কবলে হারিয়ে আজ হয়েছে ‘শিশু’। অবশ্য আমার কাজ
শিশুদেরকে নিয়েই। আমার এই ‘শিশো’র কাজই হল, রাস্তার পাশে যে সব ঝুপড়ি, বস্তি ইত্যাদি আছে,
তার শিশুদেরকে জীবনের মূল স্রোতে টেনে এনে একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের খোঁজ
দেওয়া। আজ থেকে বারো বছর আগে যখন এই ‘শিশো’ জন্ম নেয়, তখন শুধু এই স্ট্রিট চিলড্রেনদের
শিক্ষা নিয়েই আমরা কাজ করতাম না। শুরুতে একটু বড়ো ক’রে কাজ শুরু করতে হয়েছিলো ফিনান্সারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। শিশুসহ অন্যান্যদের
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি থেকে শুরু ক’রে নানা কাজ করতাম। গ্রামেগঞ্জে নানা স্থানে বিনা অর্থব্যয়ে চক্ষু চিকিৎসা,
রক্ত পরীক্ষা, থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা, এমন নানা কাজ করেছি। তখন আমার নিজের অল্প
বয়সজনিত কারণে একটা আদর্শ থেকে নেমেছিলাম এই কাজে। যুবক বয়স থেকে এই কাজে নিমগ্ন
থাকতে গিয়ে আমি জীবনে চাকরী’র চেষ্টা পর্যন্ত
করতে পারিনি। বাড়িতে, আত্মীয়মহলে, এমনকি প্রতিবেশী দরবারে নানা নিন্দামন্দ আমাকে
শুনতে হয়েছে। আমাকে বাউন্দুলে হিসেবে অনেক বদনাম শুনতে হয়েছে। তখন এনজিও শব্দটি মানুষ
তেমন শোনেনি। এনজিও পুরো কথাটাও জানা ছিলো না মানুষের। এটি খায়, না মাথায় মাখে--- তা
জানতে চায়নি কেউ। তখন থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে চলতে আজ ‘শিশো’কে একটা ভালমন্দ
রূপ আমি দিতে পেরেছি। আজ গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জুড়ে আমার এই সংগঠনের কাজ চলে। শিশুদের
এমনকি তাদের পরিবারের বয়স্কদেরও স্বাক্ষরতা দেওয়া থেকে শুরু ক’রে তাদের সচেতনতা তৈরী আমার এই শিশোর কাজ। কিন্তু আজ আর
আমাকে ‘বাউন্দুলে’, ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানে পার্টি’ ইত্যাদি ইত্যাদি শুনতে হয় না। বরং আজ আমি শুনি, আমি
লেগেছিলাম ব’লেই এখানে আসতে
পেরেছি। আজ আমার এটাই জীবন-জীবিকা। শুধু জীবিকা নয়, আজ প্রতিবেশী ও আত্মীয়মহলে আমি
ঈর্ষা’র পাত্র। আমার নিজস্ব একটা গাড়ি, তিনতলা
বাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ থেকে শুরু ক’রে সব। সবকিছুতেই
আমি আমার আত্মীয়মহলে সবচেয়ে এগিয়ে। সবই আমার এই শিশো’র কল্যাণে। তাই আজ মানুষ আড়ালে বলে--- ধান্ধাবাজ। সমাজের
কাজ করে, না হাতী করে।
কিন্তু আমি ওসব কথায় কান দেই না, কারণ আমার শিশো’তে আজ কাজ ক’রে জীবিকা অর্জন
করছে অন্তত এগারোটি মেয়ে, তেইশ জন ছেলে। তাদেরকে আমি রীতিমত মাইনে দিই। অন্তত
দু-হাজার শিশু আর তাদের পিতামাতা জড়িয়ে আছে এনজিও-টির সাথে। আমার স্ত্রী কিন্তু আমাকে
এ বিষয়ে মোটে পোঁছে না। সে বলে,
--- ছাড়ো তো। ফুটপাথের শিশুদের আবার পড়াশুনো। পড়াশুনো কি
সবার জন্যে! সবাই যদি সব করে, তবে তো মহা মুশকিল। এইজন্যেই বর্ণাশ্রম ছিল সমাজে।
সব কাজ সকলকে দিয়ে কোনোদিন হয়নি, হয়ও না। প্রকৃতি সকলকে একই সামর্থ্য দিয়ে পাঠায়নি।
আমি মুখস্ত করা কথা বলি--- সে কি! এ তো অগণতান্ত্রিক আর কায়েমি
স্বার্থের কথা বলছো তুমি। একটা সভ্য দেশে এমনটা চলে নাকি!
--- চলে চলে। জোর ক’রে অন্য কিছু চালাতে গেলে অনর্থ হয়। দেখছো না? দেশে কী অনর্থ ঘটছে?
--- কী অনর্থ ঘটছে? আমি ভ্রু কুঁচকে বলি।
অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং গভীর আস্থা’র সাথে আমার স্ত্রীদেবী বলেন--- চাষি’র ছেলেপুলে দল বেঁধে চাষ ছেড়ে চাকরী করতে ছুটছে। একদিকে
চাষের জমি নিষ্ফলা যাচ্ছে, আর একদিকে যাদের সেই জমিটুকু নেই, তাদের চাকরীতে থাবা
বসাচ্ছে এইসব মানুষ। বেকার সমস্যা বাড়ছে। আরে বাবা, ধাঙ্গড় যদি বলে, নোংরা ধোব না,
বাবু হবো, তবে তো তোমাকে-আমাকে সেই নোংরা ঘাঁটতে হবে। সেটা পারবে তো?
আগে ভেবে না দেখলেও তক্ষণই মেনে নিতে পারিনি স্ত্রী’র এ হেন অকাট্য যুক্তি। তাই বিরোধ করি--- তাই ব’লে শিশু’র জন্মগত অধিকার
থাকবে না! সে পড়াশুনো করতে পারবে না! এটা কি বিচার? ওদের এই শৈশব কি প্লাস্টিক কারখানায়,
দেশলাই কারখানায়, চায়ের দোকানে খাটতে খাটতে শেষ হবার জন্যে?
আমার স্ত্রী আক্রমণ করে--- এ্যাতো যে বলছো! বলতো, কারা ওরা?
আমি বলছি, শোনো। ওরা বাংলাদেশ থেকে ঝেঁটিয়ে এখানে এসে ভিড় বাড়িয়েছে। দুমদাম
বাড়িঘর, ফ্ল্যাট, দোকান কিনে নিচ্ছে, বাজার দর বাড়িয়ে ফেলছে, টাকার গরম দেখাচ্ছে। এ
হলো পয়সাওয়ালা মানুষগুলো। ওরা আমাদের মুখের অন্ন তো ছিনিয়ে খাচ্ছেই, এবার ঐ রাস্তা’র মানুষগুলো আরো কী কি ছিনিয়ে নেবে, কে জানে। আর কারখানা’র কথা ব’লছো? ওদের বাপ-মা
তো ওদেরকে কাজে পাঠিয়ে ওদের রোজগার খাবে ব’লেই ওদেরকে পৃথিবীতে এনেছে। যার বিয়ে তার হুঁশ নেই, পাড়া-পড়শি’র ঘুম নেই। বাপ-মা তাদের সন্তানকে ক্যাশ করছে, আর তুমি করবে
দেশোদ্ধার। ওদের ল্যাঠা ওদেরকেই সামলাতেই দাও না কেন? তুমি কে? সরকার আর পার্টি তো
তোমাকে-আমাকে নয়, ওদেরকে দেখার জন্যে এক পা তুলে ব’সে আছে। এ্যাতোগুলো এক্সট্রা ভোট। এর মধ্যে আবার তুমি কেন?
আমি কী ক’রে স্ত্রী’কে বোঝাই, ‘হে বঙ্গললনা, তুমি
যাহা কহিতেছো, তাহা যথার্থ বটে। কিন্তু এই যে তোমার এই ঠাট-বাট--- এই সকল তো ওই শিশুগুলাকে মাধ্যম করিয়াই ঘটে। আমি যে মুঠা
মুঠা অর্থ বরাদ্দ পাই, তাহা তো তোমার উদরস্থ করিবার জন্য নহে, রানী। এই এনজিও-টিকে
ভরসা করিয়াই তো তোমার এই গৃহে আগমন, শপিং নামক একটি ব্যয়বহুল নেশা করা, ভ্রমণ,
ফুর্তি।’
কিন্তু সব কথা তো মুখ ফুটে বলতে হয় না। সব সত্যি জানার নয়, সব
সত্যি বলার নয়, সব সত্যি বোঝাবারও নয়। আমিও মানি, আমার স্ত্রী যা বলছে, তা শতকরা
একশ ভাগ সত্যি। আমি এইসব এনজিও-ফেনজিও ক’রে দেশের কোনো বিপ্লব-টিপ্লব ঘটাবো না। শুধু রাজভোগ চাই আমার। এটা একটা মোক্ষম
পথ। আমি জানি যে, আজকের দিনে এসব নিতান্ত ভালো কিছু ভাবা একটা বিলাসিতা মাত্র। কিন্তু
মাঝে মাঝে কিছু এলোমেলো বিপরীত ভাবনাও আমার মাথায় চেপে বসে। আগে এমন ভাবনাটা মোটেই
হতো না। কিন্তু আজকাল রাতে ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি, কে যেন ব’লছে, তুমি একটা হিপোক্রিট, নরকের কীট। প্রতারণা ক’রে জীবন ধারণ করছো।
আজও এইসব ভাবছিলাম, এই সময় আমার প্রজেক্ট এগজিকিউটিভ সমর
এসে প্রায় কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে জানালো--- স্যার, ভেরি সরি, একটা কথা আপনাকে জানানো
হয়নি। অবশ্য এটা আমারই দোষ। আমি আমাদের এই লেটেস্ট এক্সটেনসিভ প্রজেক্টটা কভার
করতে গিয়ে একটা সাইট মিস ক’রে গেছি। অথচ
কাজটা প্রায় শেষের পথে।
আমি কৌতূহলী--- কী ব্যাপার বলো তো? কোন সাইট?
--- আর এন বোস রোড, স্যার। ওখানে বেশ কিছু স্লাম টাইপ ঝোপর
পট্টি আছে। অন্তত আড়াইশো ফ্যামিলি আছে আর এন বোস রোডের দুপাশের ফুটপাথে। পুরোটা
বাদ প’ড়ে গ্যাছে।
আমার মাথায় হাত প’ড়ে গেলো শুনে। প্রজেক্টটা প্রায় সমাপ্তির পথে। এটা জমা দিতে পারলেই একটা ফ্যাট
গ্র্যান্ট এসে যাবে। এটা আমার ‘শীশো’র কাজের সবচেয়ে বড়ো গ্র্যান্ট। আগামী সাত দিনের মধ্যে এর
টোটাল ফিচার আমাকে দিতে হবে। এমনকি এর একটা সার্ভেও করা হবে টাকা স্যাংশান করার
আগে। কিন্তু হাতে সময় কৈ? সমর আমার বিরাট টেবিলটার সামনে নিতান্ত অপরাধী’র মতো মুখ কাঁচুমাচু ক’রে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তো বলতে পারছি না, দোষটা আমারও। প্রজেক্ট সীটটা চেক করার
সময় আমিও মিস ক’রেছি এই এরিয়া। আর
এন বোস রোড আমার অচেনা নয়। আমার অফিস থেকে মাত্র পাঁচটা বাস স্টপেজের পরে। শুধু
তাই নয়। বরং বললে ভালো হয়, এটা আমার বিলক্ষণ চেনা লোকালিটি। এর সাথে জড়িয়ে আছে
একটা অবিস্মরণীয় স্মৃতি। মাত্র দুটো বছর আগের ঘটনা সেটা।
প্রত্যুষ। মানেন প্রত্যুষ মৈত্র আমার ক্লাসমেট। ওর বিয়েতেও
আমি ছিলাম। শুধু ছিলাম না, ওর বাসরঘর থেকে শুরু ক’রে ফুলশয্যা অবধি আমার আবাধ বিচরণ ছিল। সেই প্রত্যুষ ওর বিয়ের পরের বছরেই হঠাৎ
একদিন আমার সাথে কনট্যাক্ট করে ও। একটা ভয়ঙ্কর প্রব্লেমে ফেঁসে গিয়ে আমার হেল্প
চায়। আমি ওর বাড়ীতে গিয়ে একেবারে আকাশ থেকে পড়লাম। যা ঘটেছে, তাতে না আছে ওর হাত,
না আছে ওর মিসেস-এর হাত। একেবারে ঈশ্বরের মার। সত্যিই ওরা ফেঁসে গিয়েছে একটা ক্রাইসিসে।
ওর মিসেস প্রেগন্যান্ট--- এটা আমি জানলাম। সেটা তো ক্রাইসিস নয়। কিন্তু এই
প্রেগ্ন্যান্সি’র পরিণাম যে এমন
ভয়াবহ হবে, তা তো কেউ ভাবেনি। ইউএসজি ক’রে ডাক্তার বলেছে যে, বেবি এ্যাবনরম্যাল। পসিব্লি স্প্যাস্টিক পেশেন্ট হবে
বেবি। প্রথম চাইল্ড স্প্যাসটিক হবে— এটা মেনে নিতে
পারে কোন প্যারেন্ট? প্রত্যুষও পারেনি। অথচ সিচুয়েশন তখন হাতের বাইরে। বেবি এ্যাতোটাই
ম্যাচিওরড হয়ে গেছে যে, এ্যাবোর্ট অসম্ভব।
মাথা গরম ক’রে প্রত্যুষ আমাকে
ব’লে ওঠে--- দেব, আই কান্ট এ্যাফোর্ড দিস।
এই চাইল্ড নিয়ে আমি কি সারা জীবন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবো নাকি? এই আপদ নিয়ে আমি কী
করবো!
‘আপদ’ কথাটা এমনভাবে বলল,
যেন আমিই ওর স্ত্রী’র প্রেগ্ন্যান্সি’র জন্যে বা এই বেবি এ্যাবনরম্যাল হবার জন্যে দায়ী। আমি
অবস্থা সামাল দিতে গিয়ে বলি--- আহা, মেনে নিবি না, তো কী করবি? এতে তো কারোর হাত
নেই রে। আর বেবি’রই বা কী দোষ!
শান্ত হ। সব ঠিক হয়ে যাবে।
কথাকটা বললাম বটে, কিন্তু আমি নিজেও জানি, কিছুই ঠিক হবার
নেই। এই বেবি যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন এর লোড ওদেরকে বইতে হবে। এটা অবশ্য মঙ্গল
যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন বেবি দীর্ঘকাল বাঁচে না।
প্রত্যুষ কী বুঝলো, জানি না। কিন্তু আমার কথা শুনে আর কোনো
দ্বিতীয় মন্তব্য করলো না। শুধু আমাকে বলল,--- এ ফ্রেন্ড ইন নীড ইজ এ ফ্রেন্ড ইনডিড,
দেব। আমাকে একটা হেল্প কর।
আমি টেড়িয়ে তাকিয়ে দেখলাম, ওর বৌ নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। এই
অবস্থায় কী বলতে হয়, আমি জানি না। আমি তো বিয়েই করিনি তখন। শুধু মনে মনে জপ করছি, ঐ
রকম একটা প্রভার্ব দিব্যি দিয়ে আমাকে যেন আবার ব’লে না বসে, তোর ‘শীশো’তে বাচ্চাটা বিয়ে নে। আমার তো সে রকম কোনো প্রভিশন নেই। তাই
ক্যাবলার মতো বললাম--- কী হেল্প চাইছিস, বল।
--- তোর তো নানা ডাক্তার-বদ্যি নিয়ে কারবার। আমাকে একটা
ভালো গায়নো দে। বেশ ভালো গায়নো। পুরুষ। মহিলা হবে না। আমি তার কাছেই ডেলিভারি
করাবো।
আমি ভাবলাম, পুরুষ কেন? সকলে মহিলাই তো চায়। বললামও--- কেন?
পুরুষ কেন?
ও বলল--- এটা খুব ডেলিকেট কেস। ডাক্তার বলেছে। আমি কোনো লেডি
ডকের ওপর ডিপেন্ড করতে পারছি না।
আমি কথাটা শুনলাম, মনে মনে আনন্দিত হ’লাম, কেননা আমি যে আশঙ্কা করছিলাম, তেমন তো কিছু বলেনি। উপরন্তু
আমার কথা শুনেছে। আর যেটা ও চাইছে, সেটা তো আমার পক্ষে জলভাত। ঐ আর এন বোস রোডের
যে নার্সিংহোম আছে, সেটা এতদঞ্চলের সবচেয়ে বড়ো আর অভিজাত নার্সিংহোম। এর সাথেই
যুক্ত আমার বিশেষ খাতিরের ডক্টর বুধাদিত্য রায়। একডাকে চেনে সকলে। তাই প্রত্যুষের
স্ত্রী’কে ভর্তি করা হল ‘লাইফ টাইম’ নার্সিংহোমে। কিন্তু
কেন যে ও আমার পরিচিত ডাক্তার চাইছিলো, তা আমি তখন বুঝতে পরিনি। বৌ-এর নার্সিংহোমে
এ্যাডমিশন হবার পর থেকেই ও ডাক্তার’কে, নার্স’কে জনে জনে ঐ স্প্যাস্টিক বেবি’র দায় তুলে নেবার জন্যে বা অন্য কোথাও তুলে দেবার জন্যে
একটা চ্যানেল করতে চেষ্টা করছিলো। এমনকি মোটা টাকা অফার করতেও পেছোয়নি। আমাকে
ডাক্তার বুধাদিত্য রায়ই আমাকে ফোনে সবটা জানালেন। শুনে তো আমি থ। জানি, এই বেবি ওর
জীবনে একটা অভিশাপ। কিন্তু তাই ব’লে এখন থেকেই
এমনটা ভেবে বসবে, আর তার প্রস্তুতি নেবে, তা ভাবিনি। ও আমার সম্মানটাও ভাবল না।
এখানে আমি সম্মনীয় ব্যক্তি। ভাবলাম, ওর বৌ-ই বা কীরকম মহিলা! কিছু বলছে না!
কিন্তু হলো না। কাউকে পেলো না প্রত্যুষ যার হাতে নিজেকে
দায়মুক্ত করার উপায় পাবে। কিন্তু ও যে ভয়ংকর কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারে, তা আমি
স্বপ্নেও ভাবিনি। পরে সিজারিয়ান ক’রে প্রত্যুষের
বউ-এর ডেলিভারি হতে বুঝলাম ওদের ডাক্তার ঠিকই বলেছিলেন। আমি ওইদিনই শেষবার
নার্সিংহোমে গিয়েছিলাম। প্রত্যুষ’কে দেখে আমি আরো
অবাক। ও কিন্তু কোনো বিতর্ক না ক’রে, কোনো সীন
ক্রিয়েট না ক’রে একদম চুপ। অনেকটা
ঝড়ের আগে যেমন ক’রে আকাশে মেঘ থম
মেরে থাকে। প্রত্যুষ বৌ-এর ডেলিভারি করিয়ে নিয়ে চ’লে গেলো। কিন্তু আমি অবাক হলাম, কেননা এই নার্সিংহোম থেকে ডিসচার্জ নিয়ে চ’লে যাবার সময় আমাকে কোনো খবর দেয়নি প্রত্যুষ। ভাবলাম, দেয়নি
তো বেঁচে গেলাম। আমি আর গা করিনি, কোনো খবর নেইনি। নেইনি মানে নিতে পারিনি। আমার এ্যাম্বিশন
আমাকে ছুঁড়ে দিলো ব্যস্ততার জগতে। মনে মনে নিজেকে প্রবোধ দিলাম, নিজের সন্তানকে
স্বচক্ষে দেখার পর হয়তো সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছে প্রত্যুষ। বাবা তো। বাবা না হওয়া
পর্যন্ত এক, হ’লে পরেই সম্পূর্ণ
ভিন্ন।
কিন্তু আমার বিয়েতে ওদেরকে নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে জানলাম, ওরা
শিফ্ট করে গেছে। কোথায়, আমাকেও জানায়নি প্রত্যুষ। আশ্চর্য। কিন্তু ভীষণ অবাক হলাম
জেনে যে, কী একটা কারণে প্রত্যুষ আর মল্লিকা’র মধ্যে নাকি সেপারেশন হয়ে গেছে। বাবা-মা হবার পরেই সেপারেশন। কেন, কে জানে। ভাবলাম,
জানবারই বা কী দরকার! এ তো আকছার ঘটছে। আমার খুড়তুতো বোনই তো। বিয়ের সাত মাস পরেই
ডিভোর্স। কিন্তু আমার চোখে মাঝে মাঝে কেন জানি, প্রত্যুষের বাচ্চাটার একবার দেখা নিষ্পাপ
মুখ, ফর্শা ধবধবে চেহারা, আর কচি কচি হাতের একটিতে একটা সুতো দিয়ে টিকিট ঝোলানো নম্বর
২৪ ভেসে ভেসে উঠতো। ঐ ২৪ নম্বরটা বেশ কিছুকাল আমাকে ভুলতে দেয়নি ঘটনাটা। শেষের
দিকে স্মৃতিতে শুধু ঐ নম্বরটা ভাসতো। ২৪। মনে মনে বাচ্চাটাকে কমপ্লিমেন্টস দিলাম,
যা শালী, তোর নাম জানি না বটে। কিন্তু তুই খুব করলি যা হোক। যে বাপ তোকে প্রায় ত্যাগই
করেছিলো, সে-ই তোকে দেখা ইস্তক নিশ্চয়ই ফেলতে পারেনি। থ্যাঙ্ক ইউ। একটা পাপ থেকে
বাঁচিয়ে দিলি আমার বন্ধুটাকে।
সেই আর এন বোস রোড। আমার প্রজেক্ট এগজিকিউটিভ সমরের এমন
ক্ষমতা হয়নি যে, এই সামান্য সময়ের মধ্যে আর এন বোস রোডের প্রায় দু-আড়াইশো
ফুটপাথবাসী’র রিপোর্ট বানিয়ে জমা দিতে পারবে। আমি
বুঝলাম, এটা আমাকেই করতে হবে। কীভাবে একটা বিরাট কাজ ঝটিতি ক’রে ফেলতে হয়, সেই ম্যাজিকটা তো ওর জানার কথা নয়। সমর যে
জানে না, সেটা সমর নিজেও জানে। ফলে আমাকেই কাজে নামতে হবে। আমাদের আত্মীয়মহলে বলে ‘দেব সেনশর্মা একটা জ্যান্ত ম্যাজিক’। মাটি ধরলেই নাকি সোনা। আমি গোটা বিষয়টা একবার ছ’কে নিয়ে পরের দিনই হাজীর হ’লাম আর এন বোস রোডে। চোখে পড়লো সেই ‘লাইফ টাইম’ নার্সিংহোম।
আমি মনে মনে ঠিক ক’রলাম, এমন কয়েকটা ঘরে আমি আমার কোয়েরিজ চালাবো, যাতে সবকটা ঘরে আমায় ঢুকতে না
হয়। এতেই আমি একটা মোটামুটি ফিচার পেয়ে যাবো। একেবারে ছকে বাঁধা কোয়েরিজ। বেছে
বেছে একটা একটা ক’রে দুটো ঘর ভিজিট
ক’রে শেষে যে ঘরটাতে এলাম, সেই ঘরটা আমাকে
ভীষণ আঘাত করলো। লোকটির নাম বীরেন পাইন। দুই মেয়ে আর তিন ছেলের বাপ--- এমনটা বীরেন
পাইনের বৌ জানালো। দেখলাম, বিজ্ঞাপনের ঢাউস ঢাউস হোরডিঙ্গ ছিঁড়ে এনে পুরনো ছ্যাচার
বেরা দিয়ে ঘর বানিয়েছে। অন্য পাঁচজনের ঝুপড়ির মতোই ঝুপড়ি। একটা ঝুপড়িতেও শৌচকর্ম
করবার কোনো ব্যবস্থা নেই। মিনিট কুড়ি হেঁটে গেলেই রেললাইন। সেখানেই প্রাতঃকৃত্য
সম্পন্ন করে হয়তো। দেড় হাত চওড়া একটা ফালি বারান্দা পেরিয়ে এক চিলতে ঘর। তাতে কোনো
চৌকি-টৌকি নেই। তক্তা পেরেক মেরে পাটাতন বানিয়ে খাট, আর ইট সাজিয়ে খাটের পায়া। পুরনো
টালি দিয়ে ছাদ। চারদিকে শুধু পলিথিন আর পলিথিন। বর্ষায় আর ঠাণ্ডায় কীট-পতঙ্গের মতো
বেঁচে থাকে ওরা। একটি মেয়ে বাইরে ব’সে বাসন মাজছিলো। বীরেন
পাইনের বৌ আমাকে ভেতরে ডেকে নিয়ে গিয়ে জানালো যে, বীরেন গিয়েছে কাজে। ও
মিউনিসিপ্যালিটি’র ময়লা পরিষ্কার
করার কাজ করে। পাড়ায় পাড়ায় ময়লা তুলে এনে একটা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলাই ওর কাজ। আজও
তাকে কর্তৃপক্ষ পার্মানেন্ট করেনি। বৌ বাড়ি বাড়ি ঠিকে ঝি-এর কাজ করে। সবে কাজ সেরে
বাড়ি ফিরেছে সে। তিন ছিলের দুটি গেছে কাজে। একটি ট্রেনে হকারি করে। আমলকী ব্যাচে।
আর একটি কাজ করে একটা চায়ের দোকানে। ছোটটি ঘরের মধ্যে ব’সে আছে সবচেয়ে ছোট কন্যা সন্তানটিকে আগলে। সবচেয়ে ছোটটি
একেবারে ছোট, কিন্তু কত বয়স হবে, কে জানে। বাচ্চাটা বিছানায় শোওয়া। ছেলেটিকে দেখে আন্দাজ
করতে হয়। কিন্তু শায়িত বাচ্চাটি দেখে আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম। বেশ মনে হল, বাচ্চাটি
বোধহয় হ্যান্ডিক্যাপড্। তার চেয়ে যেটা আমাকে বেশী ক’রে ঘাবড়ে দিচ্ছিলো, সেটা হল, বাচ্চাটা কেমন যেন হাবে-ভাবে
অস্বাভাবিকও লাগছে। একেই বলে স্প্যাস্টিক চাইল্ড। এইসব ফুটপাথবাসীদের বাচ্চাদের
মধ্যে এই রোগটা তেমন ক’রে আমি আগে পাইনি।
ওদের অন্য নানা রোগ দেখেছি। ম্যালনিউট্রিশনের রোগ্ পোলিও, বেরিবেরি, আরো এটা ওটা।
কিন্তু এই এ্যাবনরম্যালসি দেখিনি। ভাবলাম, হতেই পারে। এটাকেই কেন্দ্র ক’রে আমি আমার স্ত্রী’র ভাষায় একটু রেগে গিয়েই মহিলাটিকে বললাম,
--- তোমার একটি মেয়ে আর তিন-তিনটি ছেলে। তবুও তোমাদের আরো
একটি সন্তানের কী দিরকার ছিল, বলো তো। আর এমনটা করতে গিয়ে এই রুগ্ন মেয়েটিকে
পৃথিবীতে আনলে! আমার তো মনে হয়, একে বিয়ে দিতে পারবে না, একে দিয়ে তুমি কোনো
উপার্জন করাতেও পারবে না। কিন্তু কে দেখবে একে? সেটা ভেবে দেখেছো? সামনের বড়ো বড়ো
স্কাই স্ক্র্যাপার দেখিয়ে বললাম--- ঐ যে বাড়িগুলো দেখছো, ওখানে এমন রুগ্ন শিশু
জন্মালে ওরা দেখতে পারে। ওদের টাকা আছে, পয়সা আছে। তবুও ওরা চায় না, এমন সন্তান
ওদের পরিবারে আসুক। তোমরা তো সাধ ক’রে এমনটা করলে।
তোমার একটি মেয়ে রয়েছে, তিনটি ছেলে রয়েছে, তবুও...
আমাকে থামিয়ে দিয়ে মহিলাটি যা যা বলল, তাতে আমি যেন পালাতে
পারলে বাঁচি। ইতিমধ্যে বড়ো মেয়েটি ওর হাতের কাজ ফেলে, হয়তো বা হাতের কাজ সেরে
দরজার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। ওর চোখেমুখে কেমন একটা ভয় ভয় ভাব। মেয়েটির বয়স পনেরো,
কি ষোল হবে। সবকটি বাচ্চাই প্রায় এক দেড় বছরের ব্যবধানে জন্মেছে। ছোট ছেলেটি পরম
যত্নে তার ছোট বোনটিকে মশামাছি থেকে নিজের হাত আন্দোলিত ক’রে ক’রে করছে। আমাদের
ঘরে এইটুকু বাচ্চা একটি ছেলের মধ্যে এই কেয়ারিং বা এই স্নেহময়তা বড়ো একটা চোখে পড়ে
না। তারাই তো থাকে আদরে-গোবরে। কিন্তু এই শিশুটি যেন কতটা পরিণত, কতটা সচেতন। আমার
সম্বিৎ ফিরল ওদের মায়ের কথায়। সে বলল,
--- বাবু, এই বাচ্চাটাকে দেখুন তো। এবার আমাকে দেখুন। আপনার
মনে হয়, এই বাচ্চা, এমন ফর্শা টুকটুকে মেয়ে কি আমার মতো কালো কুশটি মেয়েলোকের পেটে
হয়?
আমি কী জবাব দেবো, জানি না। আমি এও জানি না, মেয়েটা এমন ব’লছে কেন। কী বলতে চায় ও? তাই ব’লেই দিলাম--- মানে? তোমার ঘরে পালিত হচ্ছে যে বাচ্চা, সে কি
অন্য কারোর নাকি? আর ওভাবে কে ‘কালো কুশটি’, আর কে ‘ফর্শা টুকটুকে’--- তা তো বিচার করা যাবে না। আর আমি পুলিশও নই, যে তোমাকে
এ্যারেস্ট করবো। আমি তো জানতে চাইছি। তুমি বলো।
মেয়েটা একবার বড়ো মেয়েটির দিকে, একবার নিজের ছোট ছেলেটির
দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলল--- আমি এই বাচ্চাটাকে আজ দু বছর ধ’রে পালছি। এর বয়স দুই বছর।
আমি হতবাক। পালছি মানে! তাই বললাম--- পালছো? তুমি কি দত্তক
নিয়েছ নাকি? কিন্তু কেন গো মেয়ে? তোমার সন্তান থাকতে আবার দত্তক নিতে গেলে
কেন?
মুচকি হাসে বীরেনের বৌ। বলে--- দত্তক! এমনিতেই নিজেদের ছেলেমেয়ে
পালতে পারি না। আবার দত্তক নেব কীভাবে, বাবু?
--- তবে?
এবারে মহিলা আমার পায়ে পড়ে আর কি। হাতজোড় ক’রে বলে--- বাবু, আপনাকে আমরা চিনি। আপনি আমাদের ঘরের
বাচ্চাগুলোর জন্যে অনেক কিছু করেন। আমি সত্যি বলছি, আমি এই বাচ্চাটাকে কিন্তু চুরি
করিনি।
চুরি যে ওরা করেনি, সে আমিও জানি। চুরি ক’রে করবেটা কী? চুরি ক’রে বিক্রি ক’রে দেওয়া ছাড়া তো
আর কোনো কারণ থাকতে পারে না। কিন্তু বিক্রি যে করেনি, সে তো দেখতেই পাচ্ছি। আর
সবচেয়ে বড়ো কথা হল, এই বাচ্চা কেউ কিনবেই বা কেন? তবে? মেয়েটি নিজেই উত্তরটা দেয়,
--- একে আমার বড়ো ছেলে পিলু ঐ নোংরার মধ্যে কুড়িয়ে পায়।
--- কুড়িয়ে পায়, মানে!
--- সকালে উঠে দাঁতন মাজতে মাজতে ঘাট করতে যাচ্ছিলো। সেই
সময় ঐ নোংরার মধ্যে একটা বাচ্চা’র কান্নার আওয়াজ
শুনতে পায়। একটা তোয়ালে দিয়ে জড়ানো ছিল। নিশ্চয়ই কোনো বড়লোকের বাড়ি’র মেয়ে হবে। পিলু’র তো ঘাট যাওয়া মাথায় উঠলো। বাচ্চাটাকে এনে হাজীর করলো বাড়িটতে। ওর বাবা তো
কিছুতেই রাখবে না। কার না কার বাচ্চা! থানা পুলিশ হবে। অনাথ আশ্রমে দিয়ে দেবে।
কিন্তু অনাথ আশ্রম যে কোথায় আছে, তা তো চিনি না। অনেক কান্নাকাটি ক’রে ওর বাপকে রাজী করালাম। সেই থেকে ও আমাদের কাছেই আছে। আমার
ছেলেমেয়েরা ওকে খুব ভালোবাসে। কোন বাড়ি’র বাচ্চা, আমরা জানি না। কেউ কখনও এই বাচ্চাটাকে খুঁজতেও আসেনি।
মায়ের কথাটাকে কেটে দিয়ে সবশেষে বড়ো মেয়েটি ব’লে উঠলো--- বাচ্চাটার হাতে একটা টিকিট লাগানো ছিল। তাতে
লেখা ছিল “২৪”।
আমি যেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলাম। ২৪! ও মাই গড! ২৪! আবার সেই
ছোট্ট অবুঝ আর নিষ্পাপ একটা ‘২৪’ লেখা সদ্যজাত শিশু’র হাতের ছবি আমার চোখের সামনে ফুটে উঠলো। আমি ওদেরকে কী বলবো? আমি কী-ই বা করবো?
কাঁদবো, না আনন্দে ফেটে পড়ব, নাকি লজ্জায় সেখান থেকে পালাব? আমি। আমি এসেছি ওদেরকে
জীবনের সন্ধান দিতে, একটু নিশ্চিন্ততার আলো দেখাতে। আমি কি জানি, সুখ কী? আনন্দ
কী? জীবন কী? কাকে আমি আলো দেখাবো? কোন আলো? আলোর সন্ধান আমি কি আদৌ জানি? নিজেকে
সামলে নিয়ে একটু জোর ক’রে হেসে মেয়েটার
দিকে তাকিয়ে বললাম,
--- ওর নাম কী? কী ব’লে ওকে ডাকো?
লজ্জায় গুটিয়ে গিয়ে দজারটাতে অকারণে কি একটা খুঁটতে খুঁটতে
পঞ্চদশী উত্তর দিলো--- রাজকুমারী। আমার ভাই ওর নাম দিয়েছে। ওকে কি সুন্দর দেখতে!
তাই আমরাও ডাকি ‘রাজকুমারী’।
আমি মনে মনে ভাবি, সত্যিই তুই রাজকুমারী রে। নরক থেকে
স্বর্গে এসেছিস। আমরা পারিনি। নরকেই আছি। অনেকগুলো কবিতার ছত্র, উপন্যাস আর প্রবন্ধের
নানা বাক্য চোখের সামনে ভেসে ভেসে উঠছিলো। কিন্তু বাস্তবের সামনে সেগুলো জেনও ফিকে
লাগছিলো। আমি বুঝলাম, এই গ্র্যান্ট-টা আমার পাওয়া হচ্ছে না। আমাকে আবার নতুন ক’রে গোছাতে হবে। সব গোছাতে হবে। আমার শিশো’কে গোছাতে হবে। নাই বা পেলাম গ্রান্ট। ওরকম কত গ্রান্ট আসবে,
যাবে! আমি এই রাজকুমারী’র ঘর থেকেই সব নতুন
ক’রে শুরু করবো। কাগজ-পত্র গুটিয়ে-বাটিয়ে ওদের
ঘরের বাইরে এসে প্যান্টের দু পকেটে হাত ঢুকিয়ে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা পবিত্র
শ্বাস নিতে খুব চেষ্টা করলাম। কিন্তু এই বস্তি’র বাইরে কোথায় সেই পবিত্র শ্বাস?
------------------------